-26%

ক্রিকেটার তূর্য

Original price was: 270.00৳ .Current price is: 200.00৳ .

Description

জীবনে সেঞ্চুরি ঐ একটাই, তারপর শুরু হলো উইকেট পতন। মা-বাবার ইচ্ছা ছিলো তূর্যকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা জজ-ব্যারিস্টার বানানোর। তাই তূর্যকে ক্রিকেট থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য শুরু হলো একের পর এক কোচিং আর প্রাইভেট টিউশনি। ক্রিকেটের মাঠে যাওয়ার সময়টায় যোগ হলো আরো একজন টিচার। মহল্লার সঙ্কীর্ণ মাঠে যে প্র্যাকটিসের সুযোগ ছিলো সেখানেও নির্মিত হলো মাল্টিস্টোরেড কমার্শিয়াল বিল্ডিং। ক্রিকেটের মাঠের স্থান দখল করলো সাইবার ক্যাফে, ক্রিকেটের স্থান দখল করলো ইন্টারনেটের এ্যাডাল্ট ছবি।

তূর্যর আরেক বন্ধু অর্ণব। মা-বাবার সাথে অর্ণবের সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুত্বপূর্ণ। দু’জনেই প্রযুক্তিমনা মানুষ। অর্ণব যখন ক্লাস এইট পাস করে নাইনে উঠলো তখনই বাসায় এনে দিলো ল্যাপটপ। সাইবার ক্যাফের নিষিদ্ধ এ্যাডাল্ট ছবি নয়, বাসায় বসে অর্ণব প্রতিদিন চর্চা করে তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞানভাণ্ডারের মহাসমুদ্র। সে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো সবার উপরে।

বিত্তবান ডাক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান পার্থ। মা-বাবার অসীম অর্থ লালসার ফলে পার্থ যেন অনেকটা মূল্যহীন। তার কাছে বাবা-মা মানে প্রয়োজনের সময় টাকা-পয়সা দেয়া। তার প্রতি মা-বাবার কোনো আদর স্নেহ নেই, কোনো শাসন ও শৃঙ্খলার বন্ধন নেই। অতি অল্প বয়সে সীমাহীন অর্থ আর লাগামহীন স্বাধীনতা তাকে বেপরোয়া করে তুলেছে। কোচিং-টিউশনির নাম করে মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া, ক্লাসের আগে ও পরে সাইবার ক্যাফেতে বসে এ্যাডাল্ট ছবি দেখা তার একরকম নেশায় পরিণত হয়েছে। তার সঙ্গে জুটেছে তানিয়া।

তানিয়া মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা ব্যবসায়ী, দিনরাত ব্যবসার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। মা এন.জি.ও কর্মী। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে করতে নিজের স্বামী-সন্তানের প্রতি অনেকটা উদাসীন হয়ে পড়েছে আর সেসুযোগে একমাত্র মেয়ে তানিয়াও পার্থর সঙ্গে সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতে শুরু করেছে, আসক্ত হয়ে পড়েছে।

তূর্যর আরেক বান্ধবী তিশা। প্রথমদিন সাইবার ক্যাফেতে যাওয়া দেখেই তিশার বড়বোন নিশা তাকে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছে। তথ্য প্রযু্ক্তির জ্ঞানসমুদ্রের সেও একজন জ্ঞানপিপাসু নাবিক।

একদিন তূর্য সাইবার ক্যাফেতে ঢুকবে এমন সময় দেখা তানিয়ার। সে পার্থর জন্য অপেক্ষা করছিলো এমন সময় তূর্যকে দেখে তার সাথে গিয়ে সাইবার ক্যাফের সঙ্কীর্ণ সেলে বসলো। কিছুক্ষণ পর পার্থ তানিয়াকে তূর্যর সেলে দেখে ভীষণ রেগে গেলো। দু’জনে কিছুক্ষণ রাগারাগির পর পার্থ তানিয়াকে দেখে নেয়ার হুমকি দিলো।

কয়েকদিন পার্থর সঙ্গে তানিয়ার কোনো যোগাযোগ নেই। পার্থ আর সাইবার ক্যাফেতেও আসছে না। একদিন তানিয়া তূর্যর সঙ্গে ব্রাউজ করার সময় তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো তার সাথে পার্থর রোমান্টিক মুহূর্তের ছবি। সে আঁতকে উঠলো। তার পা দুটো শিথিল হয়ে এলো। চেয়ার থেকে ওঠার শক্তিও যেন সে হারিয়ে ফেললো। তূর্য কোনোভাবে তাকে ধরে রিক্সায় করে বাসায় পৌঁছে দিলো।

পুরো দিনাজপুর শহরে ঘটনাটা চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি করলো। তানিয়ার মা তাহমিনা থানায় পার্থর নামে মামলা করলো। পুলিশ পার্থকে আ্যরেস্ট করলো। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ তূর্যকেও আ্যরেস্ট করলো। তূর্যকে আ্যরেস্ট করার কথা শুনে থানায় ছুটে এলো অর্ণব, তিশা আর তানিয়া। ওসি সাহেব প্রথমে অর্ণবের কথাকে আমলে নিলেন না। পরে অর্ণব ওসি সাহেবকে বোঝাতে সক্ষম হলো যে তূর্যকে ওপেন করে দেয়া ইমেইল অ্যাকাউন্ট থেকে পার্থই তানিয়া আর পার্থর ভিডিও ছবি আপলোড করেছে। পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দীতেও পার্থ নিজের দোষ স্বীকার করলো।

ততক্ষণে থানার সামনে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিজ্ঞ বিচারক মামলার নথিপত্র পুংখানুপুঙ্খুরুপে বিশ্লেষণ করলেন এবং পার্থকে কারাদণ্ড দিয়ে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন।

মুক্তি পেয়ে তূর্য মায়ের কোলে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “ক্রিকেটার তূর্য”

Your email address will not be published. Required fields are marked *