En este momento estás viendo দাগ

দাগ

ঊর্মি কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়লো তার জীবনে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পর সে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য অ্যাফিডেভিড করে নিজের নাম পরিবর্তন করেছে, পরিচিত বন্ধু-বান্ধব সবার কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রায় সবরকম চেষ্টাই করেছে, এতদিন নিজেকে লুকাতেও পেরেছে কিন্তু আজ বোধ হয় আর নিজেকে লুকানো হলো না। ঊর্মি নিজের কাছে সান্ত্বনা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলো, আমি তো বোরকা পরে আছি আমার শুধুমাত্র চোখ দু’টা দেখতে পাবে, শুধুমাত্র চোখ দেখে কী বারো বছর আগে কোনো মেয়েকে কেউ চিনতে পারবে? না, না, তা পারবে না কিন্তু আমার কণ্ঠস্বর? আমি আমার কণ্ঠস্বর লুকাবো কী করে?

মেয়েটি বোরকা পরে ছিলো। তাকে চেনার কোনো উপায় ছিলো না। কিন্তু তার কন্ঠস্বরটা শুভ্র’র খুব পরিচিত বলে মনে হচ্ছিলো। শুভ্র মনে মনে বললো, মেয়েটি বললো নাম ঊর্মি কিন্তু কন্ঠস্বরটা একেবারে মায়ার মতো?

চাকরিতে প্রথম দিন জয়েন করতে এসে এভাবেই ঊর্মি আর শুভ্র মুখোমুখি হয়।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে দু’জনে কথাবার্তা হয়। বেশিরভাগ সময় শুভ্র ঊর্মির পরিচয় নিশ্চিত হয় আবার মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হয়।

কাজের অবসরে বা নিঃসঙ্গতায় ঊর্মির তার অতীতের কথা মনে পড়ে।

মায়া উচ্চবিত্ত পরিবারের একমাত্র আদুরে কন্যা। চঞ্চল, সারাদিন হৈ চৈ করে ঘুরে বেড়ানো, আবেগপ্রবণ, জেদী এবং গেছো টাইপের মেয়ে মায়া। মামুনের সঙ্গে কবে কোথায় প্রথম পরিচয় হয়েছিলো তা মনে নেই। দু’জনের বাড়ি একই গ্রামে, দু’জনে শৈশব থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে, এমনিভাবে দু’জন পাশাপাশি পথ চলতে চলতে অদৃশ্য এক বাঁধনে আবদ্ধ হয়েছিলো। শুধু মায়াই আবেগপ্রবণ ছিলো না। মামুনও ছিলো যেন মায়ার চেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ। একজনের অনুপস্থিতি অন্যজনকে উতলা করে তুলতো। মামুনের মোবাইল ব্যস্ত দেখলে মায়ার মাথায় রক্ত উঠে যেতো।

মামুন আর মায়ার ভালোবাসার কথা মায়ার বাবা জানতে পেরে তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে ঘরে আবদ্ধ রেখে বিয়ের আয়োজন আরম্ভ করে। একদিকে মায়ার বিয়ের আয়োজন চলতে থাকে আর মায়া বার বার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মায়া একবার জ্ঞান ফিরে দেখতে পায় সে শ্বশুরবাড়ি, বাসর ঘরে। প্রথমে মায়ার খুব মামুনের কথা মনে পড়তে থাকে পরে ধীরে ধীরে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে কিন্তু ততদিনে তার স্বামী, ননদ, শাশুড়ি তার ওপর আরো যৌতুকের টাকা আনার জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে।

একসময় স্বামী, ননদ আর শাশুড়ির অত্যাচারে সে আত্মহননের চেষ্টা করে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখায় তার সমস্ত শরীর দগ্ধ হলেও সে প্রাণে বেঁচে যায়। প্রতিবেশী এবং স্বামী, ননদ এবং শাশুড়ি তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করে হাসপাতালে। মায়া প্রথমে কোনোকিছু মনে করতে পারে না পরে নার্সের কাছ থেকে জেনে সবকিছু মনে করার চেষ্টা করে। তার মনে পড়ে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কথা।

হাসপাতালে মায়ার সঙ্গে পরিচয় হয় আশার সঙ্গে। আশা একটি এন.জি.ও’র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। মায়া হাসপাতাল থেকে তার মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে অস্বীকার করে এবং নিজের মতো করে বাঁচার জন্য আশার সহযোগিতা চায়।

মায়া সুস্থ হয়ে ওঠার পর অ্যাফিডেভিড করে, তার নাম রাখা হয় ঊর্মি। তাছাড়া আরো কিছু আইনি প্রক্রিয়া শেষে আশা ঊর্মিকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় দেয় এবং তার লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ঊর্মি তার দগ্ধ মুখ ঢেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য বোরকা পরতে শুরু করে।

ঊর্মি একটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে থেকে আবার লেখাপড়া শুরু করে। উচ্চবিত্ত পরিবারের আদুরে মেয়ের নতুন জীবন যুদ্ধ।

লেখাপড়া শেষ করে ঊর্মি একটি বেসরকারি সংস্থায় জয়েন করে। সেখানে আবার দেখা হয় তার স্কুল জীবনের বন্ধু শুভ্র’র সঙ্গে।

শুভ্রর বাবা সরকারি চাকরি করতো, সেই সুবাদে শুভ্র দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করেছে। শুভ্র ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে ধামইরহাট সোফিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। শুভ্র আর মায়া একসঙ্গে ক্লাস এইট পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। শুভ্র মায়াকে মনে মনে ভালোবাসতো কিন্তু কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনি। ঊর্মির কণ্ঠস্বর শোনার পর থেকে বার বার করে শুভ্রর মায়ার কথা মনে পড়ছে। শুভ্র যতই ঊর্মির কাছ থেকে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে চেয়েছে ঊর্মি ততবারই শুভ্রকে এড়িয়ে গেছে।

শুভ্র’র বিয়ের জন্য অনেক আগে থেকেই কনে দেখা শুরু হয়েছে তার চাকরিতে জয়েন করার পর থেকে শুরু হয়েছে আরো জোরে শোরে। শেষ পর্যন্ত শুভ্র দেরি করছিলো ঊর্মির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য। শুভ্র’র ইচ্ছা মায়া আর ঊর্মি যদি একজনই হয়ে থাকে তবে সে ঊর্মিকে বিয়ে করবে। শুভ্র তার ইচ্ছার কথা ঊর্মিকে জানিয়েছে কিন্তু ঊর্মি যখনই শুভ্রকে মামুনের পাশাপাশি দাঁড় করিয়েছে ততবারই যেন মামুনের ছবি তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।

অবশেষে শুভ্র’র অনুরোধে ঊর্মি একদিন তার জীবনের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। তারপর কান্না ভাঙ্গা গলায় বলে, শুভ্র তুমি আমার হাতে যে দাগ দেখছো এই দাগ মামুনকে আমার ভালোবাসার দাগ, আমার মনের মধ্যে যে দাগ আছে সেটা মামুনকে হারানোর দাগ আর আমার দগ্ধ, বিকৃত মুখে যে দাগ দেখছো এটা প্রতিপত্তি আর আভিজাত্যের দেয়ালে বন্দী সমাজে বসবাসকারী নির্যাতিত, বঞ্চিত নারীদের হৃদয়ের দাগ, বলে ঊর্মি তার মুখ থেকে বোরকা খুলে ফেলে।

চলবে…

admin

জিল্লুর রহমান ০১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮ খ্রি. দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: মৃত: ইউনুছ আলী, মাতা: মোছা. মরিয়ম নেছা। মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ধর্মপুর ইউ.সি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। পাশাপাশি বিরল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। ছাত্রজীবন শেষে তিনি স্কাই টাচ এ্যাপার্টমেন্ট, বেসরকারি সংস্থা কারিতাস এবং নটরডেম কলেজে দীর্ঘ দিন কাজ করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট বর্তমান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগদান করেন। বর্তমানে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। লেখালেখির অভ্যাস ছাত্রজীবন থেকেই, তার লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়ে দৈনিক তিস্তা পত্রিকায় তারপর দৈনিক উত্তর বাংলাসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ছোট্ট একটি ভালোবাসা প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তারপর শুরু হয় উপন্যাস লেখা। ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ভ্যালেনটাইনস ডে। তারপর বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে একে একে প্রকাশিত হতে থাকে ০১ টি কাব্যগ্রন্থ, ০৬ টি কিশোর উপন্যাস, ১৭ টি উপন্যাস, ০২ টি গল্পগ্রন্থ এবং ধারাবাহিক উপন্যাস গডফাদারের ০১-০৩ খণ্ডসহ মোট ২৯ টি (অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪ এ প্রকাশিতব্য, সিক্রেট ডায়েরি সহ) গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কথাসাহিত্যিক জিল্লুর রহমান-এর লেখা ছোটগল্প অবলম্বনে, ’’একজন কবি আব্দুর রাজ্জাক’’ নামে একটি সিঙ্গেল নাটক জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল মাছরাঙা এবং ’’ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর’’ প্রচারিত হয়েছে জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল একুশে টিভিতে। তাছাড়া তার একটি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল আছে, যার নাম জেড আর টিভি। জেড আর টিভিতে দাগ নামে ০১ টি ২০ পর্বের ধারাবাহিক নাটক, ১০ টি সিঙ্গেল নাটক প্রচারিত হয়েছে। মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ Email address : :writeryillur@gmail.com Web : www.writerzillur.com Youtube : www.youtube.com/@ZillurRahmanWriter Facebook : www.facebook.com/profile.php?id=100000449437795

Deja un comentario