En este momento estás viendo খুঁজে ফিরি তারে

খুঁজে ফিরি তারে

আরশী মোবাইলের বাটন টিপলো, দুঃখিত এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহপূর্বক কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন।

সে মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে দিলো, তোমারই বা দোষ কী? তোমার সঙ্গে তো আমি নিজেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি, তুমিই বা নতুন করে সংযোগ দিবে কেনো? তুমি কোথায় ফিরোজ? কতদিন থেকে তোমাকে খুঁজছি, কতবার তোমার মোবাইলে রিং দিয়েছি, কোনোদিন তোমাকে পেলাম না। তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন, তুমি আমাকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে, তুমি বলতে আমি যেদিন প্রমোশন পেয়ে অফিসার হবো সেদিন তুমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবে। আমি প্রমোশন পেয়েছি ফিরোজ, আগামী মাসে আমার একটা র‌্যাঙ্ক লাগবে, তুমি দেখবে না?

প্রমীর অকাল মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ে রিমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরোজ দ্বিতীয় বিয়ের কথা কোনোদিন ভাবেনি। নীলফামারী থেকে জয়পুরহাট বদলি হওয়ার পর সে যে বাসা ভাড়া নিয়েছিলো সে বাসারই মেয়ে আরশী তখন বগুড়া আযিযুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্রী। প্রথম দিকে ফিরোজ যখন অফিসে থাকতো তখন আরশী প্রায় সময় দোতলায় চলে আসতো, রিমার সঙ্গে কথা বলে সময় কাটিয়ে দিতো। একদিন আরশীর সঙ্গে ফিরোজের পরিচয় হয়। আরশী যেন খুব তাড়াতাড়ি ফিরোজকে আপন করে নেয়। ফিরোজও যেন তাই। অল্পদিনের মধ্যে আরশীর ভালোবাসার কাছে ফিরোজের বয়স, সরকারি চাকুরিতে তার পদমর্যাদা সবকিছুই যেন সে ভুলে গিয়েছিলো।

এমন সময় জয়পুরহাট পুলিশ লাইনে মহিলা পুলিশে নিয়োগের সার্কুলার দেখে আরশী প্রথমে ফিরোজের কাছে পরামর্শ চায়। ফিরোজ প্রথমে আরো লেখাপড়া করার পরামর্শ দিলেও আরশীদের আর্থিক টানাটানির কথা জেনে তাকে চাকরির চেষ্টা করার জন্য উৎসাহ দেয়। ভাগ্যক্রমে আরশী মহিলা পুলিশ পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়। মহিলা পুলিশে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আরশী প্রথমেই ফিরোজের পা ছুঁয়ে সালাম করে। তারপর রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে শুরু হয় ট্রেনিং। ট্রেনিং চলাকালে আরশীর সবসময় ফিরোজের কথা মনে হতো, তার মনে হতো ফিরোজই যেন তার সব। ফিরোজে জীবনেও ধীরে ধীরে প্রমীর স্থান দখল করে আরশী।

ট্রেনিং শেষে আরশীর পোস্টিং হয় রাজশাহী জেলার বাঘমারা থানায়। আরশী প্রথমে ভেঙ্গে পড়লেও ফিরোজ তাকে সান্ত¦না দেয় এবং সবসময় তার পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দেয়। ফিরোজ প্রায় আরশীর সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজশাহী যেতো, সারাদিন দু’জনে নব-দম্পতির মতো রাজশাহী চষে বেড়ানোর পর ফিরোজ আরশীর সংসারের প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দিয়ে জয়পুরহাট ফিরতো।

আরশীকে মহিলা আসামি নিয়ে প্রায়ই রাজশাহী যেতে হতো। সেখানে তার পরিচয় হয় কন্সটেবল নূরের সঙ্গে। তখন নূরের পোস্টিং ছিলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন কোর্টে। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে প্রথমে সখ্য গড়ে উঠে, তারপর প্রেম। নূর আরশীকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখায়, আরশী নূরের দেখানো স্বপ্নে বিভোর হয়ে ফিরোজকে ভুলে যায়। আরশী আর ফিরোজের বিষয়টিকে আরশীর বোন-দুলাভাই অর্থ উপার্জনের একটা মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে আরশীকে ফিরোজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে উৎসাহিত করে। ফিরোজ জয়পুরহাট থেকে বদলি হয়ে যায়।

নূর আরশীর সঙ্গে প্রতারণা করে। নূর-এর প্রতারণা আরশীর মনে ফিরোজের সঙ্গে তার আচরণের জন্য অপরাধবোধ জাগিয়ে তোলে। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করার জন্য আরশী মনে মনে তাকে খুঁজতে থাকে। ইতোমধ্যে আরশীর প্রমোশন হয় এবং র‌্যাঙ্ক পরানোর দিন নির্ধারিত হয়। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করা আরশীর জন্য আরো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আরশী তার বান্ধবী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত জেসমিনের সহযোগিতায় ফিরোজের হেড অফিসের ঠিকানা বের করে। সেখানে যোগাযোগ করে জানতে পারে ফিরোজ কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে রিজাইন করেছে। আরশী সেখান থেকে ফিরোজের ঠিকানা নিয়ে রওয়ানা হয় তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায়।

চাকরি ছেড়ে দিয়ে এইচ.বি.এস পজিটিভ ভাইরাসে আক্রান্ত ফিরোজ কাউকে না জানিয়ে তার একমাত্র কলেজ পড়–য়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত দিনে রিমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন রাতেই ফিরোজ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে জরুরি ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।

দিনাজপুরে ফিরোজের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে আরশী এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কেল ফিরোজ সাহেবের বাড়িটা কোনো দিকে? প্লিজ যদি বলতেন?

তিনি অদূরে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ফিরোজের বাড়িটা তো ঐদিকে কিন্তু ও তো-

কী হয়েছে আঙ্কেল?

ও তোমার কে হয় মা?

আঙ্কেল ফিরোজ সাহেব আমার পরম শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ, তাঁর এক মেয়ে আছে নাম রিমা, তিনি আমাকে রিমার মতো স্নেহ করেন। ফিরোজ সাহেব আমার গার্জিয়ানের মতো, বন্ধুর মতো, তিনিই আমার সব।

ভদ্র লোক অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বললেন, তাহলে তো তুমি সব হারিয়েছ মা।

admin

জিল্লুর রহমান ০১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮ খ্রি. দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: মৃত: ইউনুছ আলী, মাতা: মোছা. মরিয়ম নেছা। মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ধর্মপুর ইউ.সি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। পাশাপাশি বিরল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। ছাত্রজীবন শেষে তিনি স্কাই টাচ এ্যাপার্টমেন্ট, বেসরকারি সংস্থা কারিতাস এবং নটরডেম কলেজে দীর্ঘ দিন কাজ করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট বর্তমান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগদান করেন। বর্তমানে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। লেখালেখির অভ্যাস ছাত্রজীবন থেকেই, তার লেখা প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়ে দৈনিক তিস্তা পত্রিকায় তারপর দৈনিক উত্তর বাংলাসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় তার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ছোট্ট একটি ভালোবাসা প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তারপর শুরু হয় উপন্যাস লেখা। ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ভ্যালেনটাইনস ডে। তারপর বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে একে একে প্রকাশিত হতে থাকে ০১ টি কাব্যগ্রন্থ, ০৬ টি কিশোর উপন্যাস, ১৭ টি উপন্যাস, ০২ টি গল্পগ্রন্থ এবং ধারাবাহিক উপন্যাস গডফাদারের ০১-০৩ খণ্ডসহ মোট ২৯ টি (অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪ এ প্রকাশিতব্য, সিক্রেট ডায়েরি সহ) গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কথাসাহিত্যিক জিল্লুর রহমান-এর লেখা ছোটগল্প অবলম্বনে, ’’একজন কবি আব্দুর রাজ্জাক’’ নামে একটি সিঙ্গেল নাটক জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল মাছরাঙা এবং ’’ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর’’ প্রচারিত হয়েছে জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল একুশে টিভিতে। তাছাড়া তার একটি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল আছে, যার নাম জেড আর টিভি। জেড আর টিভিতে দাগ নামে ০১ টি ২০ পর্বের ধারাবাহিক নাটক, ১০ টি সিঙ্গেল নাটক প্রচারিত হয়েছে। মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ Email address : :writeryillur@gmail.com Web : www.writerzillur.com Youtube : www.youtube.com/@ZillurRahmanWriter Facebook : www.facebook.com/profile.php?id=100000449437795

Deja un comentario